আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া ঘটে যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। এলার্জি হলো এমন একটি প্রতিক্রিয়া যা শরীরের ইমিউন সিস্টেম কোনো নির্দিষ্ট উপাদানের প্রতি অতিসংবেদনশীল হয়ে পড়লে দেখা দেয়। এটি সাধারণত ত্বকে, শ্বাসযন্ত্রে বা হজম ব্যবস্থায় প্রভাব ফেলে, তবে অনেক সময় রক্তেও এলার্জির উপসর্গ দেখা দিতে পারে। রক্তে এলার্জির লক্ষণ অনেক সময় অন্যান্য রোগের সঙ্গে মিল থাকায় তা চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে যায়। এই কারণে এই বিষয়ে সচেতনতা ও প্রাথমিক জ্ঞান থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
রক্তে এলার্জি কাকে বলে?
রক্তে এলার্জির সংজ্ঞা
রক্তে এলার্জি বলতে মূলত বোঝানো হয়, যখন কোনো অ্যালারজেন (যেমন: ধুলাবালি, খাবার, ওষুধ, পোকামাকড়ের বিষ, ইত্যাদি) শরীরে প্রবেশ করে এবং তা রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, তখন শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। এই প্রতিক্রিয়া থেকে নানা ধরনের লক্ষণ দেখা যায়।
কিভাবে এটি আলাদা?
রক্তে এলার্জির সমস্যা সাধারণ এলার্জির চেয়ে কিছুটা আলাদা ও বেশি গুরুতর হতে পারে। এটি অনেক সময় অ্যানাফাইলাক্সিস নামক একটি প্রাণঘাতী প্রতিক্রিয়া ঘটাতে পারে, যার ফলে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন হয়।
রক্তে এলার্জির সাধারণ লক্ষণসমূহ
চর্ম সংক্রান্ত প্রতিক্রিয়া
রক্তে এলার্জি হলে অনেক সময় ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা যায়, যেমন:
- ফুসকুড়ি বা চুলকানি
- লালচে বা ফুলে যাওয়া দাগ
- ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হওয়া
এই ধরনের ত্বকের লক্ষণ সাধারণত এলার্জির একেবারে প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে ধরা হয়।
শ্বাসকষ্ট ও বুক ধড়ফড়
রক্তে এলার্জির প্রভাবে অনেকেই হঠাৎ করে শ্বাস নিতে কষ্ট অনুভব করেন। বিশেষ করে যদি এলার্জেন ফুসফুস বা ব্রঙ্কাসে পৌঁছে যায়, তাহলে নিঃশ্বাসে হুইজিং বা বুক ধড়ফড় করার মতো সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় এটি হাঁপানির উপসর্গের মতো দেখাতে পারে।
হজম সংক্রান্ত সমস্যা
রক্তে এলার্জির কারণে অনেকেই বমি বমি ভাব, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া কিংবা হজমে সমস্যা অনুভব করেন। এটি মূলত খাবারের মাধ্যমে অ্যালারজেন শরীরে প্রবেশ করলে দেখা যায়।
মাথা ঘোরা ও দুর্বলতা
একটি গুরুতর লক্ষণ হলো মাথা ঘোরা বা হঠাৎ দুর্বল অনুভব করা। এটি রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়ার কারণে ঘটে এবং অ্যানাফাইলাক্সিসের পূর্বাভাস হিসেবেও দেখা যেতে পারে।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে?
জরুরি লক্ষণ
নিম্নলিখিত লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন:
- ঠোঁট, জিভ বা গলা ফুলে যাওয়া
- নিঃশ্বাস নিতে প্রচণ্ড অসুবিধা
- হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
- শরীরের রং হালকা নীল বা ধুসর হয়ে যাওয়া
এলার্জি টেস্ট করানোর গুরুত্ব
রক্তে এলার্জি নিশ্চিত করতে চিকিৎসকের পরামর্শে এলার্জি স্ক্রিনিং বা ব্লাড টেস্ট করানো যায়। IgE (ইমিউনোগ্লোবুলিন ই) লেভেল দেখে বোঝা যায় শরীর কতটা প্রতিক্রিয়াশীল।
প্রতিরোধের উপায়
অ্যালারজেন চিহ্নিত ও পরিহার
নিজের এলার্জেন চিহ্নিত করা এবং তা থেকে দূরে থাকা হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা। উদাহরণস্বরূপ, যাদের ধুলাবালিতে সমস্যা, তাদের মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।
ওষুধ ও চিকিৎসা
চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টিহিস্টামিন, স্টেরয়েড বা ইনহেলার ব্যবহার করা যেতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে ইপিনেফ্রিন ইঞ্জেকশনও প্রয়োজন হয়, বিশেষ করে গুরুতর অ্যানাফাইলাক্সিস প্রতিক্রিয়ার সময়।
উপসংহার
রক্তে এলার্জি একটি অতিরিক্ত সংবেদনশীল প্রতিক্রিয়া যা সময়মতো চিহ্নিত না হলে মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। তাই রক্তে এলার্জির লক্ষণ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও সচেতনতা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং জীবনধারায় পরিবর্তন আনা—এই দু'টিই হতে পারে সুস্থতার চাবিকাঠি।