গর্ভাবস্থায় প্রতিটি মা চায় তার গর্ভের সন্তানের সঠিক বিকাশ ও স্বাস্থ্য। এক্ষেত্রে মা কী খাচ্ছেন, সেটাই গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধির অন্যতম মূল ভিত্তি। অনেক মা জানতে চান কি খেলে গর্ভের বাচ্চার ওজন বাড়ে, কারণ কম ওজনের শিশুরা ভবিষ্যতে নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত জটিলতার সম্মুখীন হতে পারে। তাই গর্ভাবস্থায় সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। এই ব্লগে আমরা আলোচনা করব এমন কিছু খাবারের বিষয়ে, যা গর্ভস্থ শিশুর ওজন বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

গর্ভাবস্থায় সুষম খাদ্যের গুরুত্ব

গর্ভবতী মায়ের পুষ্টি সরাসরি সন্তানের বিকাশের সঙ্গে সম্পর্কিত। এমনকি প্রথম তিন মাস থেকেই সঠিক খাদ্যাভ্যাস গঠন করা উচিত, যেন শিশুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে গঠিত হয় এবং তার ওজন ধীরে ধীরে স্বাভাবিকভাবে বাড়ে। শুধু ক্যালোরি নয়, প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল এবং ভালো ফ্যাটসমূহও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

কোন কোন খাবার গর্ভস্থ শিশুর ওজন বাড়াতে সাহায্য করে?

উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার

প্রোটিন শিশুর কোষ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডিম, দুধ, ছানা, মাছ, মুরগির মাংস এবং ডাল প্রোটিনের ভালো উৎস। প্রতিদিন অন্তত ৭০-৮০ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করাই নিরাপদ ও কার্যকর।

স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড

বাচ্চার মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুর বিকাশে ফ্যাট গুরুত্বপূর্ণ। বাদাম, ঘি, অলিভ অয়েল, অ্যাভোকাডো এবং চিয়া সিড ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত খাবার খেলে শিশুর ওজন বেড়ে যায় এবং সে মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়।

দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্য

দুধ, দই এবং পনিরে থাকে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও ভালো ফ্যাট, যা শিশুর হাড় গঠনে সাহায্য করে এবং ওজন বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও সহায়ক।

ফলমূল ও শাকসবজি

ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রাকৃতিক ভিটামিনসমৃদ্ধ ফলমূল যেমন কলা, আম, আপেল এবং সবজির মধ্যে গাজর, পালং শাক, বিট এসব শিশুর স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

পূর্ণ শস্যজাত খাদ্য

ব্রাউন রাইস, ওটস, আটা, বার্লি ইত্যাদি ধীরে হজম হয় এবং শরীরে দীর্ঘ সময় ধরে শক্তি সরবরাহ করে। এটি মায়ের শক্তি বৃদ্ধি করে ও শিশুকে প্রয়োজনীয় ক্যালোরি দেয়।

ড্রাই ফ্রুটস ও বীজ

বাদাম, কাজু, কিশমিশ, খেজুর এবং তিল বীজে থাকে প্রচুর ক্যালোরি ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট যা গর্ভের শিশুর ওজন বাড়ায়।

পর্যাপ্ত পানি ও ঘুমও গুরুত্বপূর্ণ

শুধু খাওয়া নয়, পর্যাপ্ত পানি পান ও বিশ্রামও গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মায়ের শরীর যদি জলশূন্য হয়, তাহলে গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। পাশাপাশি পর্যাপ্ত ঘুম শিশুর বিকাশে সহায়তা করে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত?

যদি দেখা যায় নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করার পরেও গর্ভের শিশুর ওজন বাড়ছে না, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। অতিরিক্ত ওজনও যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি কম ওজনও নানা জটিলতা ডেকে আনতে পারে। প্রতিমাসে আল্ট্রাসাউন্ড এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত।

উপসংহার

গর্ভাবস্থায় মায়ের খাবার শুধু তাঁর নিজের নয়, গর্ভস্থ শিশুর ভবিষ্যতকেও গড়ে তোলে। তাই প্রতিদিন সঠিক পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা জরুরি। মনে রাখা দরকার, খাবার যেন সুষম হয় এবং শরীর ও শিশুর চাহিদা অনুযায়ী মানিয়ে নেওয়া যায়। যারা জানতে চান কি খেলে গর্ভের বাচ্চার ওজন বাড়ে, তাদের জন্য এই খাদ্য তালিকা এক আদর্শ গাইড হতে পারে। তবে অবশ্যই নিজের শারীরিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাবার গ্রহণ করাই হবে সবচেয়ে নিরাপদ পন্থা।