ভাত রান্নার সময় যে জলটি ছেঁকে ফেলা হয়, তাকেই আমরা ভাতের মাড় বলি। অনেকেই এটিকে আবার নানা ঘরোয়া কাজে, রূপচর্চায় কিংবা শিশুদের ওজন বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করে থাকেন। তবে এই মাড়ের গুণাগুণ নিয়ে যেমন নানা আলোচনা রয়েছে, তেমনি এর কিছু নেতিবাচক দিকও আছে যা সচেতনভাবে জানা প্রয়োজন। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব যদি অবহেলা করা হয়, তা হলে নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই এই ব্লগে আমরা বিস্তারিতভাবে জানব ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক নিয়ে।

ভাতের মাড় কী এবং কেন এটি ব্যবহৃত হয়?

রান্নার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না গুণ?

ভাত সিদ্ধ করার সময় চাল থেকে যে পুষ্টিগুণ জলীয় রূপে বেরিয়ে আসে, সেটাই মূলত ভাতের মাড়। এটি প্রাচীনকাল থেকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অনেকে বলেন এটি শক্তি জোগায়, আবার কেউ কেউ রূপচর্চার জন্য ব্যবহার করেন। তবে এই ব্যবহারগুলো সব সময় স্বাস্থ্যসম্মত না-ও হতে পারে।

খাদ্যগুণ না ক্যালরির ফাঁদ?

মাড়ে কিছু পরিমাণে শর্করা ও ভিটামিন বি থাকলেও, তা খুবই অল্প এবং ক্যালরি প্রধান উপাদান হিসেবে বেশি পরিচিত। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান কিংবা ডায়াবেটিস রোগী, তাদের জন্য এটি বিপজ্জনক হতে পারে।

স্বাস্থ্য ঝুঁকি যা আমরা অবহেলা করি

অতিরিক্ত শর্করার চাপ

ভাতের মাড়ে থাকা প্রধান উপাদান স্টার্চ বা শর্করা। এটি খুব দ্রুত রক্তে গ্লুকোজ বাড়িয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এটি মারাত্মক হতে পারে। নিয়মিত মাড় খাওয়ার ফলে রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে গিয়ে অন্যান্য জটিলতা দেখা দিতে পারে।

ওজন বৃদ্ধি ও মেদ জমার কারণ

যারা ভাতের মাড় পান করেন, তারা অনেক সময় জানেন না এতে অপ্রয়োজনীয় ক্যালরি যোগ হয়। নিয়মিত গ্রহণ করলে ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং শরীরে চর্বি জমে যেতে পারে। বিশেষ করে যদি ব্যায়ামের মাধ্যমে সেই অতিরিক্ত শক্তি খরচ না করা হয়, তবে তা স্থায়ী ওজন বৃদ্ধির দিকে ঠেলে দেয়।

হজমজনিত সমস্যা

অনেকের হজম তন্ত্র ভাতের মাড়ের শর্করা সঠিকভাবে হজম করতে পারে না। ফলে গ্যাস, অম্বল, কিংবা ফোলাভাব দেখা দিতে পারে। যাদের আইবিএস বা হজম সমস্যা আছে, তাদের জন্য এটি আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

রূপচর্চায় ব্যবহারের ক্ষেত্রেও সতর্কতা

চুল ও ত্বকে ব্যবহারের সমস্যা

ভাতের মাড় ব্যবহারের অনেক ঘরোয়া টিপস রয়েছে। বিশেষ করে, চুল পড়া কমানো কিংবা ত্বক উজ্জ্বল করতে এটি ব্যবহৃত হয়। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় তখন, যখন এটি দীর্ঘ সময় রেখে ব্যবহার করা হয়। বাসি বা দূষিত মাড়ে জীবাণু জন্মায় যা সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। ত্বকে চুলকানি, র‍্যাশ, এমনকি ফাঙ্গাল ইনফেকশন পর্যন্ত হতে পারে।

উপসংহার

ভাতের মাড় সম্পর্কে আমাদের মধ্যে অনেক প্রচলিত ধারণা রয়েছে। কেউ বলেন এটি উপকারী, আবার কেউ মনে করেন এটি শুধুই অপচয়। বাস্তবতা হলো, মাড়ে কিছু উপকারী উপাদান থাকলেও এর অতিরিক্ত ব্যবহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে, অতিরিক্ত শর্করা, ওজন বৃদ্ধি, ডায়াবেটিস ঝুঁকি এবং হজম সমস্যার দিকগুলো আমাদের গুরুত্ব দিয়ে ভাবা উচিত। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে, প্রয়োজন বুঝে এর ব্যবহার করাই উত্তম। ভাতের মাড়ের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন হওয়াই স্বাস্থ্যকর জীবনের প্রথম ধাপ।